স্বদেশ ডেস্ক:
ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ ক্যাথেরিন কুকের সঙ্গে নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। আজ বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আজকে নতুন করে কিছু তো বলার নাই। আমরা একটি কথা বারবার বলছি যে বাংলাদেশের ওপর সমস্ত গণতান্ত্রিক দেশ যেগুলো আছে, বিশ্বের যত গণতন্ত্রকামী সংগঠন আছে, যারাই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, যারা মানবাধিকারে বিশ্বাস করে, আইনের শাসনে-জীবনের নিরাপত্তায় বিশ্বাস করে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে- সবারই এখানে একটা কনসার্ন আছে।’
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে একটা অনির্বাচিত সরকার থাকার কারণে আজকে কিন্তু মানবাধিকার, আইনের শাসন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, জীবনের নিরাপত্তা, চরম দুর্নীতি- এ বিষয়গুলো উঠছে। মূল উঠে আসছে একটা বিষয় তা হলো- অনির্বিাচিত, অবৈধ, দখরদারত্বের সরকার। সুতরাং এটা পরিবর্তনের একটা মাত্র উপায় হচ্ছে একটি নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশদারত্বমূলক নির্বাচন।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের যে রকম প্রত্যাশা, তাদেরও (ব্রিটিশ হাইকমিশনার) একই প্রত্যাশা যে বাংলাদেশ একটি নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন- জনগণ তাদের সংসদ সদস্য নির্বাচন করবে, তাদের সরকার নির্বাচন করবে। এ কনসার্ন সবার আছে এবং ব্রিটিশ দূতের তো সব সময় ছিল। আমরা ওয়েস্ট মিনিস্টার ডেমোক্রেসি ফলো করি। সুতরাং তাদের সব সময় (কনসার্ন) ছিল। এই বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আর যে প্রেক্ষাপটটা, আমরা যদি খালি ইদানীংকালের প্রেক্ষাপটটা বাংলাদেশে চলছে, যদি গত এক সপ্তাহের প্রেক্ষাপট যদি লক্ষ্য করি- কত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, কতজন আহত হয়েছে, কতজন গ্রেপ্তার হয়েছে, কত মামলা হয়েছে, তারপর কোথায় কোথায় ডিসি পোস্টিং হচ্ছে, কোথায় কোথায় পুলিশ অফিসার পোস্টিং হচ্ছে, কোথায় ইউএনও পোস্টিং হচ্ছে- এই যে নির্বাচনে চুরি করার যে প্রকল্প এটা যে গত এক সপ্তাহে এত কিছু করার পরও, এই নির্বাচনে চুরি করার প্রকল্প কিন্তু অব্যাহত আছে। এটাতে তো সবার দৃষ্টি আছে। এখান থেকে দৃষ্টি এড়ানোর কোনো সুযোগ নাই।’
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এই ভোট চুরির প্রকল্প প্রতিদিন ভীষণভাবে কাজ করছে। বিচারব্যবস্থায়ও, দেখেন না বিএনপির নেতাকর্মীদের বিচারকে ত্বরান্বিত করার জন্য অভ্যন্তরীণ যে আলোচনাগুলো চলছে, সোস্যাল মিডিয়াতে আসছে এগুলো তো বিরাট ধরনের কনসার্নের বিষয় আছে। সুতরাং কোথায় নির্বাচন ছয় মাস পরে, কিন্তু ভোট চুরির প্রকল্প একটিভভাবে চলছে। গত এক এক সপ্তাহে চলেছে, এক মাসে চলেছে, ছয় মাসে চলছে, এখনো চলছে। এটি অব্যাহত আছে।’
তিনি বলেন, ‘এই জন্য নিরপেক্ষ সরকার ব্যতীত বাংলাদেশে একটা নির্বাচন করা সম্ভব নয়। এই ভোট চুরি করার প্রকল্প ভাঙার একমাত্র উপায় হচ্ছে একটি নিরপেক্ষ সরকার গঠনের মাধ্যমে। এই আলোচনাগুলো সব জায়গায় যেমন চলছে, আমাদের আলোচনাতেও উঠে এসেছে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি যুক্তরাজ্য কোনো সমর্থন জানিয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আমির খসরু বলেন, ‘সমর্থন তোশুধু গ্রেট ব্রিটেন না, বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশগুলো বাংলাদেশে কেন আসছে, কেন বার্তা দিচ্ছে, কেন প্রতিনিয়ত নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশীদারত্বমূলক নির্বাচনের কথা বলছে? তারা কি অন্য কোনো দেশে যাচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশে যাচ্ছে? কোথাও যাচ্ছে না। সবাই বাংলাদেশে আসছে, প্রতিনিয়ত বার্তা দিচ্ছে। কেন? বাংলাদেশে যে নির্বাচন হয় না, এটা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে?’
তিনি বলেন, ‘এটা তো তারা যেভাবে কথাগুলো বলছে, তার অর্থই হচ্ছে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হচ্ছে না। বাংলাদেশের জনগণ ভোট দিতে পারছে না। তারা তাদের সংসদ, সরকার নির্বাচন করতে পারছে না। এই পরিপ্রেক্ষিতেই তো তারা কথাগুলো বলছেন।’
বিএনপির দাবির প্রতি যুক্তরাজ্যের সমর্থন আছে কি না, ফের এ প্রশ্ন করলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপির দাবি না, বাংলাদেশের দাবির প্রতি। এটা বিএনপির কোনো দাবি না, বাংলাদেশের দাবি। এ দেশের জনগণ গণতন্ত্র ফিরে পেতে চায়, তার ভোটাধিকার ফিরে পেতে চায়, আইনের শাসন, রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক, তার সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পেতে চায়। লেভেল প্লেইং ফিল্ড চায়, নিরাপত্তা চায়- এগুলো তো বিএনপি দাবি না। এগুলো বাংলাদেশের মানুষের দাবি, রাস্তায় লক্ষ লক্ষ মানুষে নেমে এই দাবিগুলো করছে তো। সুতরাং বিএনপির বিষয় না, এটা বাংলাদেশের নাগরিকদের বিষয়।’
ব্রিটিশ হাইকমিশনার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে তাগাদা দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ বিষয়ে আমির খসরু বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের অফিসে গিয়ে অংশগ্রহণমূল নির্বাচনের তাগাদা দেওয়ার অর্থটা কী? কিছুটা লজ্জা-শরম তো থাকার দরকার, তাই না?’
বিদেশিরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে কোনো আগ্রহ দেখায়নি, এমন দাবি করছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে, আপনারা বলছেন তারা তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সমর্থন দিচ্ছেন- এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হলো তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া হবে না, এটা কে না বোঝে বাংলাদেশের?’
এর আগে আজ বিকেল ৩টায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ ক্যাথেরিন কুকের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে কুক ছাড়াও কুক ছাড়াও যুক্তরাজ্যের পলিটিক্যাল কাউন্সিলর টিমোথি ডকেট উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে, বিএনপির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ।